
উখিয়া নিউজ ডটকম::
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কঠোর হুশিয়ারীর পরও উখিয়া সর্বত্র মরন নেশা ইয়াবা নেশার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইয়াবা পাচারের মাধ্যমে প্রতিদিন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্থার প্রণীত তালিকা ও এর কার্যকারিতা নিয়ে সচেতন লোকজন হতাশ হলেও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আশার আলো দেখছে তারা। এ অবস্থায় পুলিশের মহা পরিদর্শক একে.এম শহিদুল হক আগামী ২৪ মে ইয়াবা শহর খ্যাত টেকনাফ সফরে আসছেন। সেখানে তিনি টেকনাফ কলেজ মাঠে সুধি সমাবেশে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় ২০১২ সালে প্রথম ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রনয়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। সে তালিকা হালনাগাদ করা হয় ২০১৩ সালে। ২০১২ সালের ৫৫৪জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর স্থালে ১ বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে ইয়াবা ব্যবসায়ী ২১০জন বেড়ে দাড়ায় ৭৬৪ জনে। সম্প্রতি দেশ জুড়ে ইয়াবা পাচার ও সেবন আশংখ্যাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সীমান্ত রক্ষি বাহিনী বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সংগৃহীত তালিকা সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। হালনাগাদকৃত সমন্বিত এ তালিকা অনুসারে সারা দেশে ইয়াবা ব্যবসায়ী বা পাচারকারীর সংখ্যা ২০১২ সালের ৫৫৪জন থেকে বেড়ে হয়েছে ১২২৫জন। প্রতিদিন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সেবনকারীর সংখ্যাও বাড়ছে আশংখ্যাজনক হারে। প্রণীত ইয়াবা ব্যবসায়ী বা পাচারকারীদের তালিকায় নাম ঠিকানা সহ সব তথ্য রয়েছে আইন শৃংঙ্খলার বাহিনীর হাতে।
টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষে সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সদস্য, সাংবাদিক, আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহ বিভিন্ন শ্র্রেণী পেশার অনেক প্রভাবশালীর নাম থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ব্যাপারটি এক প্রকার এড়িয়ে চলেন। পক্ষান্তরে এক শ্রেনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা/ কর্মচারী/ জনপ্রতিনিধি/ রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা এসবের পরোক্ত ও প্রত্যক্ষ ফায়দা লুঠছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। প্রভাবশালী ক্ষমতা দল এসব ইয়াবা গডফাদাররা থাকে সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ইতি পূর্বেকার নির্দেশনা ও এতদিন কোন কাজে আসেনি ও এদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশী বিদেশী অবৈধ পণ্য, মাদক বা ইয়াবা হাতে নাতে পাওয়া না গেলে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভব হয়না বলে দাবি করে আসছে।
গত ৬মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় দেশ জুড়ে মরন নেশা ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোন হুশিয়ারী উচ্চারন করেন। তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। এতে আইশৃঙ্খলা বাহিনী সহ স্থানীয় প্রশাসনের মাঝে গা ঝাড়া ভাব দেখা গেলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই তা স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। এতকিছুর পরও উখিয়ার সর্বত্র ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মাঝে তেমন কোন ভয়ভীতি দেখা যাচ্ছে না। বরং ব্যবসার পরিধি, পাচার ও তৎপরতা বৃদ্ধি ঘটেছে। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি সহ প্রভাবশালী উচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি তাদের আত্মীয় স্বজন, সৃষ্ট বলয় তার বাহিরেও অনেকে ইয়াবা ব্যবসা করে বিপুল অবৈধ সহায় সম্পদের মালিক হয়েছে।
কয়েক মাস পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইয়াবা পাচারকারীদের একটি তালিকা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়। তালিকা সম্বলিত প্রতিবেদনে কক্সবাজারের “ক” অংশে জনৈক সংসদের নিয়ন্ত্রণে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। গডফাদার হিসেবে এ অংশে ১৫ জন প্রভাবশালীর নাম রয়েছে। প্রতিবেদনের “খ” অংশে মিয়ানমারের মংডু আখিয়াব জেলার ২৩ ব্যক্তির নামও রয়েছে। যাদের বাংলাদেশে ইয়াবা পাচাকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। “গ” অংশে পুলিশের ১১ কর্মকর্তার নাম রয়েছে। যারা বিভিন্ন সময় টেকনাফ, উখিয়া থানা, হোয়াইক্যং, শামলাপুর, ইনানী পুলিশ ফাড়িতে কর্মরত ছিলেন এবং এখনো অনেকে কক্সবাজার জেলা বিভিন্ন থানা, ফাড়ি বা গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত রয়েছেন।
উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদন মকবুল হোসেন মিটুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইয়াবা বিরোধী কঠোর হুশিয়ারীর পরও উখিয়ার সর্বত্র ইয়াবা পাচার ও সেবন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গভীর রাতে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার গাড়ির পিছনে এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। ছাত্র, যুবক, কিশোর সহ সব শ্রেনীর পেশার লোকজনদের ভবিষ্যত নিরাপদ জীবন গড়ে তুলতে অবশ্যই ইয়াবা পাচারকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। উখিয়া আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ও সদর রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন ইয়াবা বর্তমানে এখানকার পাড়া, মহল্লায় ছড়িয়ে পড়েছে, বিস্তৃতি ঘঠেছে প্রায় ঘরে ঘরে। ইয়াবার কারনে বাড়ছে সামাজিক পারিবারিক সহিংসতা। উখিয়া আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন ইয়াবার ভয়াবহতার বিরুদ্ধে যেখানে সরকার প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্বিগ্ন ভাব প্রকাশ করেছেন সেখানে কারও চুপ থাকার সুযোগ নেই। তিনি বলেন তালিকা হয়েছে, হবে। তালিকা ভুক্ত ও তালিকা বর্হিভূতদের অবৈধ অর্জিত সম্পদ চিহ্নিত করে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে সংশ্লিষ্ট ইয়াবা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতা অবলম্বন করে যে কোন মূল্যে ইয়াবা নির্মূল করার দাবি জানান তিনি। রামু, উখিয়া ও টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাই লাই মারমা বলেন পুলিশ সর্বদা মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের প্রনীত তালিকা তিনি এখনো পাননি তবে এব্যাপারে গোয়েন্দারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত